দুর্নীতির অভিযোগের খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত সাংবাদিক , অভিযোগ থানায়

23rd August 2020 8:20 pm মালদা
দুর্নীতির অভিযোগের খবর করতে গিয়ে আক্রান্ত সাংবাদিক , অভিযোগ থানায়


দেবাশীষ পাল ( মালদা ) :  আবাস যোজনায় কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল এক তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। কিন্তু খবর করতে এলাকায় যাওয়ার পর ঘরে ঢুকিয়ে গলায় গামছা পেঁচিয়ে ওই সাংবাদিককে দলবল নিয়ে বেধড়ক মারধর করে প্রাণনাশের চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে শাসকদলের ওই নেতার বিরুদ্ধে। মারধরে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন ওই সাংবাদিক। তার শ্বাসপ্রশ্বাসের প্রবল সমস্যা শুরু হয়। পরে বাসিন্দারা বিষয়টি জানতে পেরে সাংবাদিককে বাঁচানোর চেষ্টা করলে এক মহিলা সহ কয়েকজনকে ওই নেতা ও তার দলবল মারধর করেন বলেও অভিযোগ। পরে অবশ্য বাসিন্দারা রুখে দাঁড়ালে ওই নেতা দলবল নিয়ে গা ঢাকা দেন। পরে বাসিন্দারা আহত সাংবাদিককে উদ্ধার করে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতালে ভর্তি করান।  তাকে অক্সিজেন দিতে হয়।  ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের হোসেনপুর এলাকায়। রাতেই ওই সাংবাদিককে হরিশ্চন্দ্রপুর হাসপাতাল থেকে রেফার করা হয় চাঁচল মহকুমা হাসপাতালে।  শাসকদলের ওই নেতা অলোক পোদ্দার সহ  ৫ জনের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ জানান ওই সাংবাদিক।

 খবর করতে গিয়ে সাংবাদিকের উপরে হামলার তীব্র নিন্দা করেছে জেলার সাংবাদিক মহল। নিন্দায় সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলিও। ঘটনার জেরে ক্ষুব্ধ শাসকদলের নেতাদের একাংশও। দ্রুত অভিযুক্তরা গ্রেফতার না হলে আন্দোলনে নামারও হুমকি দিয়েছেন সাংবাদিকদের বিভিন্ন সংগঠন।  সূত্রের খবর, অলোক পোদ্দার এলাকায় কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য হিসেবে পরিচিত হলেও আদতে সদস্য হচ্ছেন তার স্ত্রী আরাধনা পোদ্দার। আরাধনা জয়ী হয়েছিলেন সিপিএম থেকে। কিন্তু বোর্ড তৃণমূল গঠন করবে বুঝতে পেরেই ভোল পাল্টে বোর্ড গঠনের আগেই নাম লেখান শাসকদলে। তারপর থেকে সক্রিয় হয়ে ওঠেন অলোক পোদ্দার। এলাকায় তার এতটাই দাপট যে, আবাস যোজনা সহ একাধিক দুর্নীতি করলেও তার বিরুদ্ধে কেউই অভিযোগ তোলার সাহস পান না। এলাকায় শুধু আবাস যোজনায় ৫০ জন ঘর পেয়েছেন। তাদের কয়েকজন ক্যামেরার সামনে স্বীকার করেছেন যে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা করে গরিব মানুষদের কাছে নিয়েছেন অলোক পোদ্দার। কিন্তু ভয়ে তারা অভিযোগ জানাতে সহস পান না। অভিযোগ করলে তাদের ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়। অলোক নিজে একটি ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্র চালান। সেখান থেকেই টাকা লেনদেন করেন বাসিন্দারা। আর পঞ্চায়েতে বাসিন্দাদের টাকা সেই কেন্দ্রে আসলে অলোক সেখান থেকে তার কাটমানি তুলে নেন বলে অভিযোগ।  সম্প্রতি সাহস করে আবাস যোজনায় কাটমানি নিয়েছেন বলে বিডিওর কাছে অভিযোগ করেছিলেন এক দুঃস্থ বাসিন্দা। সেই খবর করতে গিয়েছিলেন সাংবাদিক তনুজ জৈন। উল্লেখ্য খবর করতে গিয়েই সম্প্রতি করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন তনুজ। দীর্ঘদিন কোভিড হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। একটু সুস্থ হতেই পেশার টানে অভিযোগ পেয়ে ছুটে গিয়েছিলেন দুঃস্থের পাশে দাঁড়িয়ে খবর করতে। সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য জামিল ফিরদৌস বলেন, ওই সদস্য সিপিএমে জয়ী হয়ে লোভে শাসকদলে যোগ দেন। কাটমানি নেওয়াটা তো ওদের অধিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিবাদ করলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকরাও পার পাচ্ছেন না। সাংবাদিকের উপরে উপরে হামলার তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি। হরিশ্চন্দ্রপুরের বিধায়ক মোস্তাক আলমও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বলেন, শাসকদলের দুর্নীর বিরুদ্ধে সরব হলে ওরা কাউকে মিথ্যে মামলায় ফাঁসাচ্ছে, নয়তো হামলা করছে। এর থেকে ওদের কাছে আর কি আশায় করা যায়। জেলা পরিষদের শিশু, নারী, ত্রান কর্মাধ্যক্ষ তথা তৃণমূল নেত্রী মার্জিনা খাতুন বলেন, জানাচ্ছি। আমাদের দলের কোনও নেতা বা অন্য কেউ, সাংবাদিকদের উপরে হামলা কোনওভাবেই মানা যায় না। ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।





Others News